আমার এই পোস্টটা অনেক দিন ধরে প্ল্যান করা, প্রায় দুই বছরেরও অধিক পুরনো বলা যায়। দুঃখের বিষয় সময় হয়ে ওঠেনাই কখনো পুরাটা লেখা কমপ্লিট করার, এই থিসিস ডিফেন্স শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত। লেখাটা অনেক বড় হবে, তবে আশা করি কারো কারো উপকারে আসবে। তাই আগ্রহ থাকলে একটু ধৈর্যসহকারে পড়ার অনুরোধ। এই পোস্টটার থিম হচ্ছে এমন কিছু সুযোগ বা অপরচুনিটি শেয়ার করা যেগুলো আমাদের বেশিরভাগেরই কাছে অজানা। এমন কিছু কথা বলা যা আমার নিজের হোঁচট খেয়ে খেয়ে- ক্ষেত্রবিশেষে পড়াশোনা বাদ দিয়ে সময় নষ্ট করে করে শেখা। অনেকেই এগুলো এক্সপেরিয়েন্স করে কিন্তু সঙ্গত কারণেই সবাইকে বলে বেড়ানো হয়না, কেউ তোমাকে আগ বাড়িয়ে বলবে না, তুমি টু দা পয়েন্ট জিজ্ঞেস করলে হয়তো জানতে পারবা। লেখাটা পার্সোনাল অপিনিয়নে পূর্ণ অর্থাৎ বায়াজড হবে, কিছু অপ্রিয় সত্য থাকবে, হয়তো একটু রুড হবে- সবকিছু বিবেচনা করেই সেটা গ্রহণ করার অনুরোধ থাকলো। কারণ দিনশেষে একজনেরও লাভ হলে আমারও লাভ।
আমার পার্সোনালি এই জিনিসটা মনে হতো সবসময়ই- হয়তো তোমাদেরও হয়। স্কুলে থাকতে একটাই গোল সবার, ভালমত বোর্ড পরীক্ষা দিয়ে ভাল কলেজে টেকা। কলেজেও তাই, ভালমত বোর্ড পরীক্ষা দাও, বুয়েট-মেডিকেল-ভাল ভার্সিটি ক্র্যাক করো। এই স্টেজগুলায় কোচিং থাকে, মডেল টেস্ট থাকে হেল্প করার জন্য। কিন্তু ভার্সিটিতে কী? না আছে কোনো গাইডলাইন, না আছে কোনো ডেফিনিট গোল। পাশ করে কী করবো? তার পরে কী? তার পরে? ইত্যাদি। এর মধ্যে একবার যদি একটু রেজাল্টটা নেমে যায় কোনো কারণে- হতাশা আরো ঘিরে ধরে। যারা একটু জুনিয়র তাদের জন্য বলছি- যেকোনো ইঞ্জিনিয়ারিং গ্র্যাজুয়েটের জন্য পাশ করার পরে দুইটা মেজর রাস্তা থাকে- একাডেমিয়া অর্থাৎ রিসার্চ-উচ্চশিক্ষা, আরেকটা হলো ইন্ডাস্ট্রি অর্থাৎ ইঞ্জিনিয়ারিং বা অন্যান্য সেক্টরে চাকরি। এই পুরো লেখাটাই একজন একাডেমিক এনথুসিয়াস্ট মানুষের পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে লেখা, যে অন্যান্য দিকগুলোও অল্পস্বল্প এক্সপ্লোর করার চেষ্টা করসে। যদিও একটা পয়েন্টে মেজরিটিই ইন্ডাস্ট্রি জবে চলেই আসে, কিন্তু দ্বিতীয় পয়েন্ট অফ ভিউটা এই পোস্টের জন্য অত খাটবে না, সেটার ব্যাপারে অন্যদিন আলাপ হবে হয়তো। আজকের উদ্দেশ্য- কিছুটা হলেও একটা আইডিয়া দেওয়া রিসার্চ করতে আগ্রহীদের জন্য আন্ডারগ্রাড সময়টায় কী কী সুযোগ এক্সপ্লোর করা যাইতে পারে একাডেমিকের পাশাপাশি, আর আমার মত যাদের সিজিপিএ নট ঠু গুড, নট ঠু ব্যাড, তাদের জন্য একটা মোটিভেশন দেওয়া যে মানবতা আসলে কখনো মরে না, সবসময় বেঁচেই থাকে কীভাবে যেন।
একটা বহুল প্রচলিত কথা আছে, আমাদের সবার জানা। মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। আমরা জাতিগতভাবে বাঙ্গালিরা এই পয়েন্টে পিছিয়ে। একটু চোখ কান খোলা রাখলেই বুঝতে পারবা- মায়ের দোয়া ক্রিকেট টিম থেকে শুরু করে আমাদের আশেপাশের অনেক কিছুতেই এইটার উদাহরণ স্পষ্ট। সবাই একটু সেফ খেলতে চাই, অল্পতেই খুশি হয়ে যাই, নিজের কমফোর্ট জোনের বাইরে যেতে চাইনা। একজন বুয়েট স্টুডেন্ট হিসেবে, যে কিনা সহজ কথায় দেশের সেরা মেধাবীদের একজন হিসেবে নিজেকে অলরেডি প্রমাণ করেছে, তার জন্য এই বিষয়টা অপমানজনক বলে আমি মনে করি। যদি সুযোগ থাকে- যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ (সবচেয়ে বড়) আশ- এটা নিতান্তই আমার পার্সোনাল ভিউ, সবার সাথে নাও মিলতেই পারে- সেই দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিও সম্মান। ভূমিকা শেষ, আসল কথায় আসি। কয়েকটা আন্তর্জাতিক/ ইন্টারন্যাশনাল সুযোগের কথা বলে যাই, যেগুলা আমার মতে বুয়েট সিএসই স্টুডেন্টদের এক্সপ্লোর করতে পারা উচিত, এবং সেটা খুবই সম্ভব, বিভিন্ন সময় আমাদের আশেপাশের মানুষজনই তার প্রমাণ দিয়েছে। একটু ক্যাটাগোরাইজ করে নিলে বোধহয় সবার জন্যই বুঝতে সুবিধা হবে।
১/ ভার্সিটি বা প্রতিষ্ঠান ভিত্তিকঃ
ক) সেন্ট্রাল আয়োজন / ইন্সটিটিউট কেন্দ্রিকঃ যেহেতু এটা একাডেমিয়া-সেন্ট্রিক পোস্ট, তাই বিভিন্ন সামার রিসার্চ প্রোগ্রামের কথা না বললেই নয়। প্রায় সব বড় বড় ভার্সিটিতেই সামার সেমিস্টারে অর্থাৎ ঠিক এই জুন-জুলাই-অগাস্ট মাসেই সাধারণত পিএচডি স্টুডেন্টরা বিভিন্ন জায়গায় ইন্টার্নশিপ করতে চলে যায়, আর ফ্যাকাল্টিরাও ফ্রি টাইম পান। আর তখন ডেডিকেটেডলি কিছু ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ প্রোগ্রাম/স্কুল রান হয়। দুইটা সুসংবাদ, দুইটা দুঃসংবাদ। খারাপ খবর গুলা হচ্ছে, স্বাভাবিকভাবেই এই প্রোগ্রামগুলায় চান্স পাওয়া অনেক কম্পিটিটিভ হয়, এবং ইন্টারন্যাশনাল এপ্লিকেন্টদের মধ্যে চাইনিজ-ভারতীয়রা এসব ব্যাপারে অনেক এডভান্সড- ভাল রেজাল্ট, ভাল রিসার্চ এক্সপেরিয়েন্সের কম্বিনেশনে তাদেরকে হারানো টাফ। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, বুয়েটের একাডেমিক ক্যালেন্ডারের কোনো আগা-মাথা নাই, বেশিরভাগ সময়ই দেখবা তুমি দুই-তিন মাস টাইম ব্যাটে বলে মিলাইতে পারতেসো না বাইরে গিয়ে রিসার্চ করে আসার মত, ফান্ডেড প্রোগ্রাম হইলেও। ভাল দিক হচ্ছে, আজকাল ডাইভার্সিটি ইনক্লুশন ইকুয়ালিটি কিংবা এ জাতীয় কোটা লেজিট কারণেই জনপ্রিয়। এসবের আওতায় সুন্দর আলাদা স্কলারশিপ বা ফান্ড পাওয়া যায়, কিংবা অন্তত টিকে যাওয়ার চান্স বেশি থাকে। আরেকটা ভাল দিক, খোঁজ-খবর নিলে রিমোটলি কাজ করার সুযোগও পাওয়া সম্ভব, সেক্ষেত্রে বুয়েটকে বুড়া আঙ্গুল দেখায়ে কাজ চালায় নিয়ে যেতে পারবা। আমার বিভিন্ন সময় এক্সপ্লোর করা কিংবা টুকটাক এপ্লাই করা কয়েকটা উল্লেখযোগ্য সামার রিসার্চ প্রোগ্রামের লিস্টঃ
- National University of Singapore, School of Computing
- MIT Summer Geometry Initiative
- Carnegie Mellon University, Robotic Institute Summer Scholars
- MBZUAI Summer Research Program
- Aalto University Summer Research
- Vector Institute Research Internship, Canada
- UIUC+ Summer Crowd Research Program
সেন্ট্রালি আয়োজিত অনসাইট (আর কিছু কিছু রিমোট) সামার রিসার্চগুলো সাধারণত ভাল এমাউন্টের পেইড হয় (আনপেইড বা ভলান্টারিও প্রচুর আছে)। বলে রাখা ভাল, সব রিমোট প্রোগ্রাম আবার ফান্ডেড হয়না, কিন্তু আমাদের তো সবসময় ফান্ডের দরকারও নাই- এক্সপেরিয়েন্স গেইন করাটাও একটা মেজর ফ্যাক্টর। টাকার চিন্তা মাথায় থাকলে হায়ার স্টাডি বা রিসার্চের ব্যাপারটা আরেকবার ভেবে দেখা দরকার সবারই- যারা এখনো আইডিয়া কম রাখি, তাদের জন্য এটা একটা পয়েন্টার। ইন্ডাস্ট্রিতে কিন্তু অনেক বেশি বেতন সেই তুলনায়, অন্তত শুরুর কয়েক বছর। রিসার্চ প্রোগ্রাম বাদে আরেক টাইপের প্রোগ্রাম আছে- সামার স্কুল। লেকচার দিবে, হাতেকলমে টিউটোরিয়াল থাকবে, রিসার্চ টক থাকবে, পোস্টার প্রেজেন্টেশন থাকবে- মোটকথা সিলেবাসের বাইরের, এডভান্সড জিনিস শেখার অনেক সুযোগ থাকে। সাধারণত এগুলায় টাকা দিয়ে রেজিস্টার করতে হয়, বাট স্কলারশিপের এপ্লিকেশন/পেপার/পোস্টার/এবস্ট্রাক্ট জমা দিয়ে কম্পিটিশন করে জিতে যাওয়া সাপেক্ষে সুন্দর ট্রাভেল গ্রান্ট আর রেজিস্ট্রেশন ফি ওয়েইভার পাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। এরকম কিছু প্রোগ্রামঃ
- School of Algorithms, Combinatorics and Complexity
- IDEAS Summer Program: Intelligence, Data, Ethics and Society
- Programming Language Implementation Summer School
- Eastern European Machine Learning Summer School
- ACM HPC Summer School
বোল্ড করা গুলোতে রিসেন্ট টাইমে বুয়েট সিএসইর মানুষজন টিকেছে, তাই তাদের এপ্রোচ করা সহজতর। আমি ইচ্ছা করেই লিংকগুলা ড্রপ করলাম না, যারা আগ্রহী এই সবকিছুই কিন্তু জাস্ট ওয়ান গুগল ক্লিক এওয়ে। এবং এইসব সামার রিসার্চ বা স্কুলের লিস্ট এতেই সীমাবদ্ধ না, আরো অনেক পাওয়া যাবে হয়তো। শুধু ধৈর্য ধরে পছন্দের প্রোগ্রাম খুঁজতে হবে আর এপ্লাই করে যেতে হবে। এবার আসি আরো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে- এপ্লাই করবো ভাবলেই কি করে ফেলা যায়? অবশ্যই না। প্রায় সব প্রোগ্রামেই তোমাকে সিভি দিতে হবে, একটা মোটিভেশন লেটার বা স্টেটমেন্ট অফ পারপাজ লিখতে হবে, এবং ক্ষেত্রবিশেষে কোনো টিচারের থেকে রেকমেন্ডেশন লেটার লাগবে। যারা এসবের টেমপ্লেট চাবে তাদের জন্য- ইন্টারনেটের এই যুগে গুগল করলেই ডক, ওয়ার্ড বা লাটেকের টেমপ্লেট পাওয়া যায়। সার্চ মারলেই এলামনাইদের প্রোফাইল পাওয়া যায়। ফটাফট গুগল করতে শেখাও এই চার-পাঁচ বছরের একটা বড় শিক্ষার জায়গা। কেউ বলে দিবে না শিখতে বাট শিখে নেওয়া লাগবেই, কোনো মাফ নাই।
এ প্রসঙ্গে একটা জীবন থেকে নেওয়া কেস স্টাডি মেনশন করার লোভ সামলানো মুশকিল। কভিডের সময়ে আমি ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে উপায় খুঁজতেসিলাম কীভাবে বুয়েট থেকে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে ভেগে যাওয়া যায়। ক্রেডিট ট্রান্সফার করাটা আসলে কষ্টসাধ্য, যেহেতু বুয়েট ক্লোজড ক্রেডিট সিস্টেমে চলে, ওপেন না। ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে কার্নেগি মেলনের রোবটিক্স রিসার্চ প্রোগ্রামটার খোঁজ পাই। রোবটিক্স নিয়ে আমার কোনোকালেই আইডিয়া ছিলনা ভাল, হালকা যেটুকু ইন্টারেস্ট থাকে সবার ঐ ওটুকুই। তারপরও সাহস করে এপ্লাই করে বসি এই আশায় যে অন্তত কীভাবে এপ্লাই করতে হয় আর কী কী ডকুমেন্ট গুছাইতে হয় এটুক তো আইডিয়া পাওয়া যাবে। লিংকডইনে আগের বছরের পার্টিসিপেন্ট খুঁজে এক ইন্ডিয়ান বদ্দারে বের করলাম, সে এটা ওটা বলল। সিভি আর এসওপিও নাহয় ভুংভাং ম্যানেজ করলাম, কিন্তু ঝামেলা বাঁধে রেকমেন্ডেশন নিয়ে। ২-১ এ তো আমি কাউকে সেভাবে চিনিইনা, লেটার ম্যানেজ দূরে থাক। আমাদের ম্যাথ কোর্সের স্যার আর জাভা কোর্সের স্যার শেষে আমাকে উদ্ধার করেন। এই ঘটনা থেকে শেখার বিষয় আছে কয়েকটা- কখনোই আমার তো কিছুই রেডি নাই ভেবে বসা থাকা যাবেনা, সেটা হবে বোকামি। সবাই গ্রাউন্ড জিরো থেকেই শুরু করে জীবনের একটা সময়ে। আর আমাদের স্যাররাও সাহায্য করার জন্য সবসময় রেডি, তারা একটা ফোনকল বা মেইল এওয়ে ফ্রম ইউ। যদিও আল্টিমেটলি আমার ঐ প্রোগ্রামে চান্স হয়নাই, আমার মোটিভেশন শক্ত ছিল না, রেকমেন্ডারদের রেকমেন্ডশন হয়তো শক্ত ছিলনা, রেলেভেন্ট রিসার্চ ছিলনা, কিন্তু আমার জন্য ঘটনাটা একটা ভাল শিক্ষার আইটেম ছিল। আর চোখ-কান খোলা রাখলে বন্ধুবান্ধবদের থেকেও অনেক কিছু শেখা যায়। আমি খুবই গ্রেটফুল আমার কিছু ক্লাসমেটের প্রতি, তাদের থেকে অনবরত শিখতে পারসি, এখনো শিখি। নাম নিয়ে বা না নিয়ে কাওকে ছোট করলাম না।
খ) প্রফেসরের পার্সোনাল / ল্যাব কেন্দ্রিকঃ
এ ধরনের প্রোগ্রামের সংখ্যাই আসলে সবচেয়ে বেশি। কারণ এগুলো মূলত আনপেইড, ভলান্টারি এফোর্ট। মানুষ এগুলো এটেম্পট করে রিসার্চ এক্সপেরিয়েন্স বাড়ানোর জন্য (ঠিক যেভাবে আমরা বুয়েটের স্যার বা সিনিয়র ভাইদের এপ্রোচ করি, একদম সেরকম)। আরেকটা মোটিভেশন হচ্ছে যার সাথে কাজ করতেসি, তাকে পটায়ে ফেলে তার আন্ডারেই মাস্টার্স-পিএচডি কন্টিনিউ করে ফেলার সুযোগ থাকে। এটার আসলে কোনো লিস্ট নাই, ওয়াইড ওপেন পসিবিলিটিজ। ভার্সিটির ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইটে যাবা, প্রফেসর চেক করবা, ওনার রিসার্চ আর টপিক পছন্দ হলে সুন্দর করে মেইল দিয়ে বসবা- প্লেইন এন্ড সিম্পল। পর্যাপ্ত হোমওয়ার্ক অবশ্যই করে যাইতে হবে আগে- পেপার পড়া, রেলেভেন্ট রিসার্চ বা একাডেমিক প্রজেক্ট গুছায়ে শোকেস করার মত অবস্থায় রাখা, একটা পার্সোনাল পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট বা গিটহাব মেইন্টেন করা বা লিংকডইনটা গুছায়ে রাখা ইত্যাদি। পছন্দ হলে প্রফেসরের রিপ্লাই পাবা, ইন্টারভিউ হলেও হতে পারে, এরপর কাজ শুরু। এই পয়েন্টটা অনেকটাই পাশ করার পরে হায়ার স্টাডির জন্য প্রফেসর খোঁজার মতই। তাই ভবিষ্যতের জন্য একটা প্র্যাক্টিসও হয়ে যাবে। পার্থক্য দুইটা- সবাই আসলে আন্ডারগ্র্যাডদের নিয়ে কাজ করতে সমানভাবে ইন্টারেস্টেড থাকেননা, আফটার অল কোর্সওয়ার্ক করে বেজমেন্ট শক্ত করা আর সিজি তোলাই এই বয়সে মূল কাজ। আর আন্ডারগ্র্যাডরা যখন এপ্লাই করে, টিচাররা ধরেই নেয় তুমি আসলে বেশি কিছু জানো না, তাই তাদের রিকোয়ারমেন্টও কম থাকে। কিন্তু এই ফাঁকতালে এইটা মিস করা চলবে না যে তারা এক্সপেক্ট করে তুমি সেলফ-মোটিভেটেড। অর্থাত তোমাকে টাইম দিলে আর গাইডলাইন দিলে তুমি দ্রুতই শিখে নিতে পারবে নিজের তাগিদেই, কমপ্লিটলি অদেখা জিনিসও। এই মাইন্ডসেটটাই খুবই ক্রুশাল আর তৈরি করা কঠিনও। আবার ভয়ে পেয়ে চুপচাপ বসে থেকেও লাভ নাই, তাই ট্রাই ইওর বেস্ট।
২/ কনফারেন্স বা ইভেন্ট ভিত্তিকঃ
আমাদের সিএসইর লাইনে ভালো কনফারেন্সের গুরুত্ব বা মর্যাদা ক্ষেত্রবিশেষে ভালো জার্নালের থেকেও বেশি (এইটা অন্যান্য মেজরিটি ডিপার্টমেন্টে কিন্তু আবার উল্টা)। টপ কনফারেন্সগুলা অনেক বড় পরিসরে হয়, ওয়ার্কশপ-টিউটোরিয়াল-প্যানেল ডিসকাশন-শেয়ারড টাস্ক এরকম অনেককিছু থাকে। ACM আর IEEE পার্টিকুলারলি মেনশন পাবার মত। এদের আন্ডারে অসংখ্য সোসাইটি, ব্রাঞ্চ, কমিটি, স্পেশাল ইন্টারেস্ট গ্রুপ আছে। এরা প্রত্যেকে নিজেদের টপিকে রেগুলার কনফারেন্স আয়োজন করে। এসব কনফারেন্সে এটেন্ড করার চারটা উপায়ঃ
ক) তোমার থিসিস বা অন্য কোনো রিসার্চ সাবমিট করে, রিভিউ পর্বগুলা উতরায়ে পেপার বা পোস্টার প্রেজেন্টের সুযোগ পাওয়া। এইটাই সবচেয়ে প্রেস্টিজিয়াস আর কঠিনও। পেপার/পোস্টার এক্সেপ্টেড হইলে সাধারণত স্টুডেন্টদের জন্য ট্রাভেল গ্রান্টে বা ফী ওয়েইভারে এপ্লাই করার অপশন থাকে।
খ) বড় বড় কনফারেন্সে আর সেগুলোর সাথে আয়োজিত ওয়ার্কশপে বিভিন্ন টপিকে কম্পিটিশন আয়োজন করা হয়, সিংহভাগ ক্ষেত্রে প্রাইজমানি আর টপারদের জন্য সলুশন পেপারে লেখে সেটা প্রেজেন্ট করার সুযোগসহ! কম্পিটিশন গুলা ক্যাগল কনটেস্টের মতই কমবেশি। উল্লেখযোগ্য এরকম কিছু কম্পিটিশনঃ
- IEEE Video and Image Processing Cup (ICIP Conference)
- IEEE Signal Processing Cup (ICASSP Conference)
- KDD Cup (SIGKDD Conference)
- Student Clustering Competition (SC Conference)
মাত্র চারটা নাম মেনশন করলেও এগুলোর সংখ্যা কিন্তু প্রচুর। আমি লিটারেলি বলে শেষ করতে পারবোনা টাইপ, বুঝতেই পারতেসো। জাস্ট লক এন্ড এক্ট। সময় হলে আরো এড করে দিব।
গ) পেপার-পোস্টার কিংবা ওয়ার্কশপ-কম্পিটিশন ছাড়াও আরেক উপায়ে কনফারেন্স এটেন্ড করা পসিবল। বড় বড় কনফারেন্স, যাদের পেছনে ভালো স্পন্সর থাকে, তারা আন্ডারগ্রাড-মাস্টার্স-পিএচডি লেভেলের স্টুডেন্টদের জন্য আলাদা মেন্টরিং প্রোগ্রাম চালু রাখে। কনফারেন্স ঘুরে দেখানো, ক্যারিয়ার রিলেটেড সাজেশন দেওয়া, কিছু টিউটোরিয়াল-ওয়ার্কশপে দলবেঁধে এটেন্ড করানো, ফ্যাকাল্টিদের সাথে পেয়ার-আপ করে লং টার্ম মেন্টরিং এর ব্যবস্থা করে দেওয়া ইত্যাদি হয় আরকি। এগুলো সংখ্যায় অপ্রতুল, একটু চোখ-কান খোলা রাখা লাগে আরকি। এপ্লিকেশন করে সিলেক্টেড হওয়া মানুষজনদের জন্য সাধারণত ট্রাভেল গ্রান্ট আর স্কলারশিপ থাকেই, তা না হলে কেউ আসবে কেন পেপার পোস্টার কম্পিটিশন ছাড়া? এরকম কিছু প্রোগ্রাম-
- HPC Immersion (SC Conference)
- Programming Language Mentoring Workshop (PLDI Conference)
- Undergraduate Architecture Workshop (ISCA Conference)
- Grace Hopper Celebration Conference
- Richard Tapia Conference
এরকম প্রোগ্রাম খুঁজলে আরো পাওয়া যাবে, বোল্ড করা গুলায় রিসেন্ট টাইমে আমাদের মানুষজন যাওয়া আসা করসেন। আরেকটা মিনি কেস স্টাডির স্কোপ- এইটা থেকেও কিছু পয়েন্ট শেখার আছে। ৩-১ চলাকালীন সিএসই-বুয়েট গ্রুপটা আর এক সিনিয়র পিএচডিরত আপুর প্রোফাইল স্টক করে HPC Immersion এর খবর পাই। ততদিনে আমি রিসার্চের কাজ শুরু করে দিসি বুয়েটের এক স্যারের সাথে, উনি রেকমেন্ডেশন দিলেন। আমি এপ্লাই করতেসি শুনে সেই আপুও হেল্প করতে আগ্রহী। এবার আমি আসলেই টিকতে ইন্টারেস্টেড, ট্রায়াল এরর করার বয়স পার করে ফেলসি। আপুকে বললাম আমি এপ্লিকেশনের প্রশ্ন গুলা মানে রচনাগুলা লেখি আপনি একটু দেখে দেন। উনি লিটারেলি পেপার রিভিউ করার মত করে আমার রচনারে কাঁটাছেঁড়া করসেন আর বেশকিছু মডিফিকেশন সাজেস্ট করসেন যথাযথ কারণও উল্লেখ করে। একইভাবে আমার স্যার ব্র্যাকে তার এক স্টুডেন্ট ফ্যাকাল্টির কাছে আমাকে রেফার করসেন উনিও যাতে আমার লেটারটা দেখে দেন। শেষমেশ আমি ঐ প্রোগ্রামটায় যেতে পারি, প্রায় ৫০০০ ডলারের কাছাকাছি যাতায়াত-থাকা-খাওয়ার খরচ কনফারেন্স পুরাটাই বহন করে। জিপিইউ প্রোগ্রামিং, প্যারালাল কম্পিউটিং এসব নিয়ে বিগিনার লেভেলের আইডিয়া পাই। তার থেকেও বড় আর মূল্যবান উপহার পাই সেই দুইজনের থেকে- যারা আমার লেখাটা রিভিউ করে দিসিলেন। আমি এখন কিছুটা হইলেও বুঝি কী লেখা লাগবে, কী লেখা যাবে না- অন্তত এসব ক্ষেত্রে। আমার মনে হয় থিসিসের রাইজ গ্রান্ট পাওয়ার ক্ষেত্রেও কোলাবরেটরকে লেখা দেখায়ে নেওয়া হেল্প করসিল। কী কী পয়েন্ট নোট করা লাগবে এই এক্সাম্পল থেকে- আর আলাদা করে বললাম না। পপি-রিয়াজজুটি বলেছেনঃ কিছু কথা বুঝে নিতে হয়।
ঘ) এইটা সবচেয়ে লুথা উপায়, খরচের দিক থেকেও। যার পেপার-পোস্টার-কম্পিটিশন-মেন্টরিং কিছুই নাই, তার আছে ভলান্টিয়ারগিরি। কামলার বিনিময়ে শিক্ষা কিংবা ভ্রমণ। এগুলা সাধারণত ফুল ফান্ডেড হয়না, পার্শিয়াল হয়। তাই বাংলাদেশ থেকে আন্ডারগ্র্যাডে শুধু এই কাজ করতে যাওয়া পোষায় না বলেই মনে হয়, গ্র্যাডস্কুলে পোষায়। তবে অনলাইনে রিমোট কামলাও দেওয়া যায়, এটা কিন্তু আবার ভালোই। নেটওয়ার্কিং অপরচুনিটি দারুণ।
জেনেরিক কিছু রিসোর্সঃ
১। ভার্সিটির বা ডিপার্টমেন্টের র্যাংকিং বুঝতেসি না?
- US News Computer Science and Varsity Ranking
- CS Ranking
- QS Ranking (এইটা উপরের দুইটার মত অত কাজের না কারণ ক্রাইটেরিয়াই আলাদা, বাট কেন জানি এইটা নিয়েই বেশি মাতামাতি হয়)
২। সিএসইতে আসলে কী কী টপিক আছে? সেসবে ভাল কনফারেন্স বের করতে চাচ্ছি? কনফারেন্সের প্রেস্টিজ কেমন বুঝতেসি না?
- CS Ranking
- Conference Ranks Website
- CORE Conference Ranking
৩। প্রফেসরের পেপার পাবো কই বা প্রেস্টিজ বুঝবো কীভাবে?
- Google Scholar
- DBLP
৪। বিভিন্ন অপরচুনিটির আপডেট পাবো কই? কোথায় চোখ-কান রাখতে হবে?
- Twitter (X)
- CSE,BUET Facebook Group
- Nextop USA Facebook Group
কষ্ট করে এতদূর পড়ে আসার জন্য অনেক ধন্যবাদ। Hope you get your due rewards for your interest, enthusiasm and dedication. নলেজ শেয়ার করলে কখনো কমে না, বরং হয়তো বাড়েই- সবাই এইটা মেনে চলার চেষ্টা কইরো যথাসম্ভব। আর আমার জন্য দোয়া করবা সবাই যেন আমি নেক্সট ফেজটা পার করে যেতে পারি ভালমত :D