3-2ing Hard

মাথায় আসলে এত কথা, এত অনুভূতি ছড়ায়ে ছিটায়ে আছে এই মুহুর্তে, ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। তারপরও একটু চেষ্টা করি।

আজীবন, একদম আজীবন মনে রাখার মত একটা সেমিস্টার কাটিয়ে ফেললাম। বুয়েট লাইফের ৩-২। কাগজে-কলমে সবচেয়ে কঠিন আর প্রেশারাইজিং একটা টার্ম। ল্যাবগুলা সিস্টেম দিয়ে ফেললাম কোনো না কোনোভাবে। নেটওয়ার্কের প্রজেক্ট শেষ মুহূর্তে এসে মিলে গেলো, এআই টাও মন্দ যায়নাই। সিস্টেম ডিজাইন ল্যাবটা বেশি সেরা গেসে, হায়েস্ট মার্ক পাইসি গ্রুপের সবাই মিলে পুশ দিয়ে। লাস্ট উইকের প্রেশার ব্যালেন্সের ট্রেড-অফে বাজে গেসে অপারেটিং সিস্টেমটা, এটুক মেনে নিতেসি আপাতত। সব পেলে নষ্ট জীবন। পিএলটা ভালভাবে কাটলেই এখন আর কিছু চাওয়া পাওয়ার থাকবে না একাডেমিকালি।

কিন্তু সবচেয়ে স্মরণীয় যেই অংশটা হয়ে থাকবে সেটা হইলো এই টার্মের ক্যাম্পাস লাইফটা। ১৭ ব্যাচের বিদায়ী টার্ম, এইজন্যই কিনা পুরা বুয়েটে উৎসব মুখর একটা পরিবেশ। বারো মাসে তের পার্বণ কথাটা এতদিন ছিল বই পুস্তকে পড়া, এই টার্মে এসে একেবারে ভেতর থেকে এক্সপেরিয়েন্স করলাম। প্রায় সব ডিপার্টমেন্টের ফেস্ট হইলো- বেশ কয়েকটা ক্লাবের ফেস্ট হইলো- প্রায় প্রতি উইকেন্ডেই আয়োজন, অনুষ্ঠান, মেলা, মব ডান্স, কনসার্ট লেগেই থাকলো। কে কার সাথে পাল্লা দিয়ে সেরা প্রোগ্রাম নামাবে, আর লেম বাঁশিবাজনা বাজায়ে আরেকজনরে ডিস্টার্ব করবে এই প্রতিযোগিতা লেগেই থাকলো। এতগুলা সেরা সেরা ব্যান্ডের আর ক্যাম্পাসের বন্ধু-সিনিয়রদের পার্ফরম্যান্স দেখলাম- এক কথায় অসাধারণ। হালের সোনার বাংলা সার্কাস, কার্নিভাল, লেভেল ফাইভ থেকে শুরু করে ভেটারান আর্ক। শেষের দুই সপ্তাহে এসে লিটারেলি বিরক্তি ধরে গেসিল যে ভাই আর কত :p ঐ দুই উইকে রিপিট বা আগে একবার দেখা সব ব্যান্ডের প্রোগ্রাম স্কিপ মারতে হইসে xD

১৭ ব্যাচের কথা পোস্টের শেষে আবার আসবে। নিজেদের ব্যাচ র‍্যাগ ব্যাচ হইতে যাচ্ছে- এই উপলক্ষে ব্যাচ নামকরণ প্রোগ্রাম হইলো তোড়জোর করে- অনলাইনে অফলাইনে হাসিঠাট্টা মারামারি সব হইলো- ব্যালট করে পুরা একদিন ভোট নেওয়া আর গণনাও হইলো। সব শেষে নিজেরাই আয়োজন করা হইলো নিজেদের প্রথম ব্যাচ প্রোগ্রাম- Interval 18 এর কনসার্ট। নেমেসিস এত সেরা লেভেলের এনার্জেটিক আর স্পট অন লাইভ পার্ফরমার, প্লাস আমার সব লিরিক মুখস্ত- সেদিন প্রথম সারিতে মনিটরের সাথে দাঁড়ায়ে যেই ভাইবটা দিসি এটা সম্ভবত লাইফের সেরা কনসার্ট এক্সপেরিয়েন্সগুলার মধ্যে একটা হয়ে থাকবে।

ফেস্টের কাপঝাপ এর আগের সেমিস্টারেই সেরে ফেলায় আমাদের হাতে বাকি ছিল পিকনিক বা ডে আউট। লাস্ট পিকনিক নামায় গেসিল ১৫ ব্যাচ, তখন আমরা ছিলাম নতুন কচি। এবার দেখি আমরাই বুড়া, আশপাশে ২০ ২১ এর কচি পোলাপান হাজির। অদ্ভুত একটা অনুভূতি বছর তিনেকের মাথায়। একসাথে সেরা একটা দিন কাটলো সেই একই জায়গায়- ঢাকা রিসোর্ট। যাওয়া আসার সময় ডাবল-ডেকার বাসের লাপঝাপই বলি, কিংবা ফুটবল-কোডিং-লটারি-স্পোর্টস-গান-সুইমিংপুল-এলামনাই সম্বলিত ইভেন্ট গুলার কথাই বলি। এক কথায় সব ব্যাচ মিলায়ে সেরা একটা দিন।

বহুত প্রোগ্রামের আনন্দ, আর অনলাইন অফলাইনরে গালিগালাজ করার মধ্যে দিয়েই কেমনে কেমনে জানি মন খারাপ হইতে শুরু করলো- কারণ কয়েকদিন বাদেই ইমিডিয়েট সিনিয়ররা ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাচ্ছে। সিনিয়র-নেওটা মানুষ হিসেবে ততদিনে আমি মনে মনে পড়ে গেসি বিশাল ফ্যাকড়ায়, ক্যাম্পাস খালি হয়ে গেলে আমি ঘুরব কাদের সাথে? র‍্যাগ কনসার্ট আর ডিপার্টমেন্টের ফেয়ারওয়েলটা যাতে খুব মেমরেবল হয়ে থাকে সেটাই ছিল একমাত্র চাওয়া। খুশির খবর এই যে, দুইটাই পসিবল হইসে।

১৫ এর বেস্ট মোমেন্ট ছিল জলের গান, ১৬ এর সময় ছিল চিরকুট, ওয়ারফেজ তো বুয়েটের রেগুলারই বলা চলে। ঠিক যেটা দরকার ছিল ১৭ ঠিক সেটাই প্রোভাইড করতে পারলো। একটা তুমুল জনপ্রিয় ফ্যান ফেভারিট ব্যান্ড আর একটা পুরান আমলের নস্টালজিয়া মেশিন ব্যান্ড- আর্টসেল আর সোলস। এতটা এক্সাইটেড ছিলাম বলার মত না। আর্টসেল নতুন গান না বাজাইলেও পুরান প্রায় সবগুলাই বাজাবে ধরে নিসিলাম- সেদিক থেকে একটু ডিজাপয়েন্টেড, বাট এক অনিকেত প্রান্তরের অর্ধেকটা আর অন্যসময় পুরাটা- দুই এলবামের দুই টাইটেল সং বাজানোই আর্টসেলের সব দোষ মাফ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু ভাই ও ভাই, সোলস ফাটায়ে দিবে এটা জানতাম, কিন্তু এভাবে উড়ায়ে দিবে এটা স্বপ্নেও ভাবিনাই। উত্তেজনায় অনুসূর্যের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পুরাটা টাইম বাঁশের ঘেরার ভিতরে ছিলাম দাঁড়ায়ে। আর যাই হোক সোলস পিছন থেকে দেখা যাবে না কোনোভাবেই। পার্থ বড়ুয়ার টাইমলাইনে করা পোস্টের কমেন্ট দেখে জানলাম ‘৮৯ ব্যাচের বিদায়ী প্রোগ্রামেও যেই উত্তেজনাটা ছিল- এই ২৩ সালে এসে সেম অনুভূতি আমরাও এক্সপেরিয়েন্স করলাম। স্পিচলেস। চলে যাচ্ছে ১৭, আমার কেন কান্না আসবে, এটা ভাবতে ভাবতেই আমিও কেঁদে ফেলসিলাম ঐ সময় আর সকালে তুহিন ভাইয়ের আভাসের সময়টায়।

প্রচুর ঘুরসি আর খাইসি এই টার্মে সবার সাথে- বইমেলা থেকে শুরু করে কফি হাউজে। ব্যাচমেটদের সাথে একাডেমিক নিয়ে কাঁদসি- গ্র্যাড থেকে শুরু করে হলে। কম্পিটিশন, কনটেস্ট দেওয়া নিয়ে রাত জেগে চক্রান্ত করসি, ডিচ করে মন খারাবিও করসি। একটা ক্লাব করি, সেটার সিনিয়র জুনিয়র ব্যাচমেটরা সবসময় আশেপাশে ছিল। বিভিন্ন মানুষজন এত উপায়ে এতভাবে হেল্প করসে সবকিছুতে যে বলার মত না। এতসব মেমোরির ভার ক্যারি করাটা আসলে উভয় সংকটের মত। আর শেষটা তোলা ছিল আমাদের সিএসই ১৭ দের জন্য। খুবই অল্প সময়ে আর নানারকম ঝামেলার ভিতরে প্ল্যান প্রোগ্রাম আর আয়োজন করা- আশা করি খুব একটা খারাপ হয়নাই ওভারল। এই মানুষগুলার জন্য যতই করা হবে, কম করা হবে। সবাই এত্ত সেরা। খুবই মিস করব সবাইকে সামনের একটা বছর।

সত্যি বলতে, প্যান্ডেমিকের গ্লুমিনেসটা অনেকটাই পোষায়ে দিয়ে গেল এই ৩-২। আর নিয়ে গেল এই বর্ণিল ক্যাম্পাস লাইফের প্রিয় সিনিয়রদের। শুধু নিজের ডিপার্টমেন্টে থেকেই না, পুরা বুয়েট ক্যাম্পাসেরই অনেক পরিচিত মুখ কালের যাত্রায় সামনে আগায়ে গেল- এই জিনিসটা একবার বুঝতে পারলে মেনে নেওয়াটা অনেক কষ্টকর। I genuinely doubt if I ever will get a campus or place full of such liveliness, even in any corner of the world. এই ক্যাম্পাসের একটা পার্ট, একটা কালার অফিসিয়ালি হারায় গেল। এক্সট্রোভার্ট হিসেবে আমার অনেক মানুষজনের সাথে এড আছে। আই উইশ সবার সাথে আরো বেশি সময় কাটাইতে পারতাম, আরো বেশি মিশতে পারতাম, কথা বলতে পারতাম। অনেক মানুষজন ভয়ানক লেভেলের মেন্টাল সাপোর্ট আর কমফোর্ট দিসে। অনেক মানুষজনরে অনেক প্যারা দিসি, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কিছু নিয়ে। ইচ্ছা করেই এই পোস্টে দুই ক্যাটাগরির কারোরই নাম নিলাম না, কাওকে মেনশন দিলাম না। If you are seeing this post, please try to forgive me, and please keep me in your prayers. চোখের আড়াল হইলেও যাতে মনের আড়াল না করে দেই কেউ কাউকে, এই প্রত্যাশাই থাকলো। These memories will keep us alive. Adios 3-2 (টার্ম ফাইনাল এক ভিন্ন মামলা, এরে আপাতত না গুণি, এক দিনের জন্য হইলেও). You will be remembered and badly missed till the last breath.

৫ মার্চ ২০২৩