সিমকার্ড, তেলাপোকা ও অন্যান্য

(১)

ফ্যাসিস্টের সফট দোসর আসাদুজ্জামান নূর সাহেব একবার গরিবের অমিতাভ বচ্চন হয়ে আসলেন টিভিতে। সাল সম্ভবত ২০১২। কৌন বানেগা ক্রোড়পতির বাংলা এডিশন ফটাফট আগ্রহী দর্শককে বাধ্য করলো সদ্য একটেলের খোলস ছেড়ে বের হয়ে আসা রবি সিম কিনতে। এসব ব্যাপারে বাসায় উৎসাহের কমতি ছিল না কোনসময়, সেই সূত্রে আমিও তাই হয়ে গেলাম একটা রবি সিমের মালিক। স্কুল পার করে নতুন নতুন টাকা জমায়ে কেনা সিম্ফোনি আর এনডিসি স্পেশাল বাটন ফোনের মধ্যে পালাবদল করে চলতে থাকলো মিস্টার রবি, এই কম্বো তাই সাপোর্ট দিয়ে গেছে বহুদিন।

ফাস্ট ফরোয়ার্ড টু ২০২০ সাল। তুলকালাম অবস্থা দুনিয়াজুড়ে। দেশে লকডাউন, বাসায় গালি খেয়েও সাতসকালে মাঝে মাঝে লুকায় লুকায় বাইরে বের হইতাম- সর্বোচ্চ ঐটুকুই। এর মধ্যে একদিন হুট করে মৃত্যুবরণ করে এতদিনের রবি সিমটা। হারায় ফেলি বেশিরভাগ কন্টাক্ট। এইটা তেমন আহামরি ইস্যু না। কারণ যাদের সাথে সোশাল মিডিয়ায় কানেক্টেড বা পরবর্তীতে রেগুলার যোগাযোগ হয়, তাদের সাথে তো নাম্বার রিকভারি হয়ই একটা পর্যায়ে গিয়ে। ভেজাল হচ্ছে যাদের কাছে আমার পুরানো নাম্বারটাই রয়ে গেল তাদের কারো কারো সাথে হয়তো কখনোই আর জীবনের রাস্তা ওভারল্যাপ হয়নাই। যতদিনে সব স্বাভাবিক ততদিনে আমি একাডেমিকালি ছ্যাকা খেয়ে ব্যাকা, দুনিয়া আন্ধার তুমি কার কে তোমার টাইপের অবস্থা। হয়তো সময় হয়নাই, কিংবা স্রেফ দরকার পড়েনাই, অথবা মাথায় তখন জাস্ট বিগার টেনশন। পুরা বিষয়টাই দুঃখজনক।

(২)

কুষ্টিয়া যাওয়া পড়ছিল এর আগেও দুয়েকবার, তবে সেটা শিলাইদহে, রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি দেখার নিয়তে পাবনা থেকে সিএনজিযোগে আর গরুর ঠেলাগাড়িতে (লিটারেলি) পদ্মার চর পাড়ি দিয়ে লোকাল সিস্টেমে। এই রুট এখনো আদৌ এক্সিস্ট করে কিনা কে জানে, জানতে পারলে ভালো লাগতো। আজকে যেটা মনে পড়ল সেটা অবশ্য বাসভ্রমণ। ২০১৯ সালের শুরুর দিকের কথা। তখন জীবনে ছিল অন্যরকম থ্রিল। বুয়েটের ক্লাস শুরু হয়নাই, ঐ সময়টাতেই আমি প্রথম একা একা একটু আধটু এদিক ওদিক ট্রাভেল করা শুরু করি। বাসের একদম সামনের এওয়ান/এটু সিটে বসে আর সারারাত ঢুলে ঢুলে ড্রাইভারের চালানো উদিত-অলকা, লতা-কুমার শানুদের মনকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেওয়া প্লেলিস্ট শুনতে শুনতে বেশ কয়েকটা জেলায় প্রথমবারের মত চলে যাই। রিসিভ করতো সদর উদ্ভাসের নেতাকর্মীবৃন্দ। বাঙালি আর যাই হোক, এলাকা নির্বিশেষে আপ্যায়ন করে ভালোই। আদর করে সব বেলায় পছন্দের বা সেই এলাকার নামকরা মাছ বাজার করে এনে খাওয়ানো, একটু পরপর খোঁজখবর নেওয়া- সত্যি বলতে দুই চারদিনের জন্য অজানা অচেনা জায়গায় একা গিয়ে ঐ সময়ে অন্তত এগুলা আমি এক্সপেক্ট করিনাই। আল্লাহ আমার নাম ভুলে যাওয়া সবগুলা উদ্ভাসের ব্রকে ভালো রাখুক, যে এখন যেখানেই আছে।

টুকটাক কিছু ফ্যাকড়া ছিল না তা না, কিন্তু সেসব হাস্যকর। দুনিয়ার তামাম মহাদুর্যোগকে সসম্মানে বুড়া আংগুল দেখায়ে আজও টিকে থাকা বিশিষ্ট উড়ন্ত মা***দের উপদ্রবে এবং মশারির অভাবে রুমের লাইট সারারাত জ্বালায় রাখা ছিল তার মধ্যে অন্যতম। কুষ্টিয়া উদ্ভাসের কথা আবার বিশেষ করে মনে আছে এখানকার ম্যাথ সার্কেলের সৌজন্যে। হালকা একটা দংঘর্ষ হয়ে গেছিল ছোট ছোট চালু পোলাপান কলেজ এডমিশনের রিলাক্স ক্লাসে অলিম্পিয়াডের ম্যাথ করতে চাওয়ায়। পোলাপানগুলার চোখেমুখে ছিল টগবগে স্বপ্ন, এরা হয়তো এতদিনে অনেকদূর চলেও গেসে। না যাওয়ার কোনও কারণ নাই।

(৩)

এমন যদি হত- আমি পাখির মত উড়ে উড়ে বেড়াই সারাক্ষণ,
পালাই বহুদূরে, ক্লান্ত ভবঘুরে, ফিরব ঘরে কোথায় এমন ঘর?

গুণে গুণে দীর্ঘ ছয় বছর বাদে আবার পা পড়ল কুষ্টিয়ায়। এবারের মোড ট্রেন, উদ্দেশ্যও ভিন্ন। সঙ্গত কারণেই একসাথে অনেকগুলো স্মৃতি এসে হিট করলো। ম্যান, আই রিয়েলি মিস উদ্ভাসের ভাইয়া হয়ে বাংলাদেশ ঘুরে বেড়ানো। উদ্ভাস তো মাঝেমাঝেই এটা ওটা প্রোগ্রামে ডাকে, এমনকি জন্মদিনের রাত বারোটায় আর কেউ উইশ না করলেও একটা মেসেজ ওদের থাকবেই। রবি নাম্বারের সাথে সাথে উদ্ভাস চ্যাপ্টারও খতম হয়ে গেছে জীবন থেকে। মতিঝিল আর বাসাবো ব্রাঞ্চ অনেকটাই আপন হয়ে গেছিল ইভেনচুয়ালি। হয়তো ফোন মেসেজ দিয়ে পায়নাই, আমিও বদার করিনাই আর নতুন করে। একটা ক্লোজার কি দরকার ছিল? ক্যান্ট রিয়েলি টেল। বহুদূরে পালানোটা নেসেসারি ইভিল।

কুষ্টিয়াকোর্ট রেলস্টেশন | ১৩ এপ্রিল ২০২৫