বিদায় পৌনঃপুনিক

প্রিয় পৌনঃপুনিক ‘১৫,

দীর্ঘ চার বছরেরও অধিক বয়সী, বহু স্মৃতিবিজড়িত স্নাতক জীবনের অন্তিম লগ্নে আজ আপনাদের প্রিয় অনুজ ‘১৮ ব্যাচের সদস্যদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নেবেন। বিদায় সবসময় যতটা মনোঃকষ্টের, ঠিক ততটাই অনিবার্য। হাজারো প্রিয়মুখের পদচারণা, প্রাণোচ্ছলতায় পরিপূর্ণ থাকতো যে প্রিয় ক্যাম্পাস, তা আজ স্তব্ধ, নিশ্চুপ। মহামারী কমিয়ে দিয়েছে আমাদের জীবনের গতি, কেড়ে নিয়েছে প্রাণ, অথচ দেখুন - জীবন কিন্তু থেমে নেই। এমন বিদায় আমরা কেউই চাইনি,হয়তো স্বপ্নেও ভাবিনি, তবু আপনাদের জীবনের পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ ধাপে এগিয়ে যাওয়ার এই ক্ষণে একরাশ শুভকামনা ও টুকরো টুকরো প্রিয় স্মৃতির ঝাঁপি নিয়ে আমরা পাশে আছি।

২০১৯ এর এপ্রিলে যখন আমরা হাজারো স্বপ্ন নিয়ে ইসিই প্রাঙ্গণে পা রাখি, নতুন অচেনা পরিবেশে অভিভাবক হিসেবে পেয়েছি আপনাদেরই। সেই থেকে শুরু - সবসময় মাথার ওপর থেকেছেন ছায়া হয়ে, প্রয়োজনে দিয়েছেন অমূল্য উপদেশ। খুব অল্প দিনের মধ্যেই আমরা আমাদের সকল অগ্রজদের সাথে সময় কাটানোর সুযোগ পাই - পিকনিক! দিনব্যাপী আয়োজনটার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উপভোগ করে আমরা একটা কথাই উপলব্ধি করতে পেরেছি - “বুয়েট সিএসইর মতো সত্যিই আর হয় না”, যার মূল কৃতিত্ব আমাদের প্রিয় অগ্রজদের- সিএসই ‘১৫ এর প্রত্যেকের।

সময়ের পরিক্রমায় গেছে কত চড়াই উৎরাই, অল্প সময়ের ব্যবধানেই আমরা দেখেছি কত পরিবর্তন, করতে হয়েছে আন্দোলন। অনুষ্ঠান, আনন্দ উদযাপন থেকে শুরু করে দুঃসময়ের দিনগুলোতেও আপনারা আমাদের সবাইকে আগলে রেখেছেন, সামনে থেকে দিয়ে গেছেন বলিষ্ঠ নেতৃত্ব। সত্যি বলতে, আপনাদের কখনোই সেভাবে মন খুলে ধন্যবাদ দেওয়া হয়ে ওঠেনি- এত অল্প সময়ে সেই সুযোগটাই যে পেলাম না! তাই এ বিদায়বেলাতেই আপনাদের প্রত্যেককে জানাতে চাই অশেষ ধন্যবাদ, আন্তরিক কৃতজ্ঞতা এবং একরাশ ভালোবাসা।

ওপরওয়ালার সিদ্ধান্ত বোঝা কঠিন, কিন্তু আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য বললেও বোধহয় কম বলা হবে - বহুল প্রতীক্ষিত এবং আমাদের বুয়েট জীবনের প্রথম ‘সিএসই ফেস্ট’ এবছর আর পাওয়া হয়ে উঠলো না। রিহার্সাল শুরু করেও শেষটা আর করা হলো না। হাতছাড়া হয়ে গেলো আপনাদের সবার সাথে আমাদের আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার একমাত্র সুযোগটা। উৎসবমুখর পরিবেশে একসাথে কামলা দেওয়া (!) থেকে শুরু করে কম্পিটিশন, কালচারাল ইভেন্টগুলোয় একসাথে আর সময় কাটানো হলো না। এই আক্ষেপ সহজে ঘোচার নয়।

নানা ঘটন-অঘটনের এই বছরশেষে আপনাদেরও যাবার সময় হয়ে এলো। উচ্চশিক্ষায়, কর্মক্ষেত্রে দেশে-বিদেশে আপনারা ভবিষ্যতে প্রতিনিয়ত সর্বোচ্চ মেধা ও কৃতিত্বের পরিচয় দেবেন- তৈরি করবেন নতুন নতুন মাইলফলক - এই শুভকামনাই করি। জীবনের সহজ-কঠিন প্রতিটি পদক্ষেপে আপনারা সাহসী অবদান রাখবেন, জয় করবেন সকল বাঁধা-বিপত্তি; ঠিক যেমনটা পার করে এলেন স্মৃতিবিজড়িত অম্ল-মধুর বুয়েটের শিক্ষাজীবন - সৃষ্টিকর্তার কাছে এই প্রার্থনাই থাকবে।

যেতে নাহি দিব হায়,
তবু যেতে দিতে হয়-
তবু চলে যায়

নিষ্ঠুর জীবন মাঝে মাঝেই আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় কবিগুরুর এই অমোঘ বাণী। কিন্তু যারা বিদায় নেয় আর বিদায় দেয় - কেবল তারাই জানে ফেলে আসা প্রিয় দিনগুলো কতটা মূল্যবান, কতটা আবেগের। পলাশীর মোড়ে কাটানো এই নানা রঙের দিনগুলোকে আজীবন আঁকড়ে ধরে বাঁচবেন, আর আমাদের সবাইকে স্নেহ-সুনজরে আগলে রাখবেন সামনের দিনগুলোতেও।

এই প্রত্যাশায়-

বুয়েট সিএসই ‘১৮