পারবনা,
আমি জানি আমি বলতে পারবনা
কেন আমি তোকে এত
ঘৃণা করি।
কেন এত অপছন্দ করি,
কেন এত গালমন্দ করি।
জানিনা।
হয়তো বেশিই ভালবাসি, সেজন্য?
কিন্তু সত্যি কথা বলতে,
তোকে দেখলে আমার মাথাটা
খারাপ হয়ে যায়, জানিস!
এলোমেলো হয়ে যায় পৃথিবী-
একদম ওলটপালট।
বাতাসে আমি শুঁকতে পাই
কাঁদামাটির নেশাধরা গন্ধ,
আর দুচোখে দেখি-
রাজ্যের হাহাকার।
বলে রাখছি,
আমি কিন্তু একটু অপ্রকৃতিস্থ!
আর তোকে আমি একদম সহ্য
করতে পারিনা।
একদম না!
তবে একটা সময় পারতাম!
তখন আমার একটা
মন ছিল।
একটা হৃদয় ছিল।
আমি তখন
চাঁদের জোছনা দুহাতে গিলে ফেলতে পারতাম
অবাধে,
ঘন্টার পর ঘন্টা বসে।
মাথায় রাজ্যের চিন্তা নিয়ে,
আর চোখে সহস্র স্বপ্ন নিয়ে।
একটা সময় আমিও মানুষ ছিলাম,
আমারও একটা হৃদয় ছিল!
তখন আমি ফুলকে সুন্দর বলতাম,
তারাভরা আকাশ আমার ভালো লাগত,
আমি তখন অবাক হয়ে চেয়ে দেখতাম
ঝাপসা বিকেল-
উদাস দুপুর,
কলতানে ভরা আমার নগর।
ফুরসতহীন মহাব্যস্ত নগর।
আমার পৃথিবীটা তখন রঙ্গিন ছিল।
কারণ,
তখন আমি কবিতা লিখতে পারতাম!
তখন আমার মাঝে একটা সে ছিল,
তার বাইরে একটা আমি ছিলাম,
আমার বাইরে একটা সে ছিল,
আমাতে একটা আমি ছিলাম।
আমরা অবাক বিস্ময়ে তোকে দেখতাম,
প্রাণ ভরে দেখতাম।
গায়ে মাখতাম তোর ফোঁটা ফোঁটা
খাঁটি ঐশ্বর্য,
আর ভেসে যেতাম মেঘের ভেলায়
দূরে-
শিহরণ-জাগা হিমশীতল দিনেও
অজানা তবু চেনা উষ্ণতার ভাঁজে।
কখনো একসময়
সোনালি আবেশের সুতো ছিঁড়ে যায়,
চেনা পৃথিবী অচেনা হয়ে যায়।
ছিন্ন দুহাত হাতড়ে বেড়ায়,
দোয়াতের কালি শুকিয়ে যায়,
আবেগের জট খেই যে হারায়,
আমার কাব্য উঠে দাঁড়িয়ে আমায়
অবজ্ঞার ক্রুর হাসি দিয়ে যায়।
আচ্ছা,
তুই তো সবই জানিস,
সবই বুঝিস,
তারপরও কেন কাঁদাতে আসিস এই আমায়
বারেবারে?
আর কত সিক্ত করবি এই
শূণ্যতার সমুদ্রকে?
আমার সময় হারায় তোর পরশ ঘেঁষে-
দূরে বহুদূরে, ওপারে গিয়েও কি
ছাড়বিনা?
এখানে আমার একান্ত কারাগারে তুই
তবুও পিছু ছাড়লিনা!
তুই চলে যা, তুই চলে যা-
দুর্বোধ্য শীতল হাওয়ার আমেজ কাটিয়ে
বর্ষামেদুর কুহক
তোকেই বলছি, তুই
চলে যা!
জানিস তো আমি একটু অপ্রকৃতিস্থ,
বড্ড মেঘবিলাসী,
তাই বছর ঘুরে বারবার আসিস না।
আমার তখন হৃদয় ছিল,
এখন প্যারালডিহাইড আছে-
তোর কি আছে?
শেষ কটা দিন গুণব প্রহর
একাকী ঘুমিয়ে।
নাকে নিয়ে সোঁদা মাটির গন্ধ, দেখে
বৃষ্টিভেজা নবপল্লবের হাসি,
আর বুকে নিয়ে আমার চিরবিচ্ছেদের তীব্র
অন্তিম স্মৃতি-
আমি এখন একটু ঘুমোবো।