সবারই হয়তো কোনো না কোনো পছন্দের উদ্ভট পাসটাইম থাকে।
আমার জন্য এটা হচ্ছে অতীতে যেসব রাস্তায় একটা বড়, সিগনিফিকেন্ট সময় কাটানো হইতো- যেসব লোকেশনের মেমোরি আমার স্মৃতিতে এখনো মাঝে মাঝে নাড়া দেয়, সেই জায়গাগুলায় চলে যাওয়া। এখন এখানে কয়েকটা সেল্ফ ইম্পোজড রেস্ট্রিকশন আছে। যেমন ভিজিটটা হইতে হবে একদম রেন্ডম, খুব বেশি ফ্রি আছি, বা খুব বেশি ব্যস্ত আছি এমন সময়ে না। এই চলার পথে হঠাৎ একটু ঐ এরিয়ার আশেপাশে যাওয়া পড়লো, বা ডেলিবারেটলি হুট করে মনস্থির করে বের হয়ে গেলাম এরকম অনেকটা- মানে প্রিপ্ল্যানড হবে না। অড টাইম হতে হবে, যেমন ঠাটা ভর দুপুর বা রাতের বেলা। পিক টাইমে আবার পরিচিত মানুষের সাথে দেখা হয়ে যাওয়ার চান্স থাকে। একই কারণে সাথেও আগে থেকে পরিচিত মানুষ থাকা যাবে না ইত্যাদি।
লোকেশনগুলা বেশ অভিয়াস। আমার শৈশব কৈশোর প্রায় পুরাটাই কাটসে শাহজানপুরে, সঠিক ধরসেন- কোচিং এর সূত্রে। আইডিয়ালের আর দশটা ছানাপোনার মত আমিও ভোর থেকে দুপুর, কোনোদিন বিকাল-সন্ধ্যা স্লটেও এই এলাকায় পড়ে থাকসি, প্রায় পাঁচ-ছয়টা বছর। নিজ এলাকা মালিবাগ-খিলগাঁও এর থেকে এদিকের রাস্তাতেই মেবি বেশি সময় কাটসে। ফান ফ্যাক্ট হচ্ছে এই তথাকথিত ক্ষতিকর কোচিং দৌড়াদৌড়ি আমি চরম এনজয় করতাম। মানে কখনো বার্ডেন মনে হয়নাই, একটা পর্যায়ে ফ্লো ফ্লো গেম থাকলেও শেষের দিকে প্যাশনেটলি নিতে পারসিলাম, চাপের মধ্যে লেখাপড়ার মজা খুঁজে পাইসিলাম। এটার জন্য আমার শিক্ষকরা ধন্যবাদ পাবেন, তাদের কারণে কীভাবে কীভাবে যেন আমি জিনিসগুলা সহনীয় হিসাবে নিতে শিখসিলাম, ক্ষেত্রবিশেষে আনন্দদায়ক হিসাবেও। নিজাম-সোহেল-জহির-বকর-ফজলুল স্যার এনাদের কথাই প্রথমে মাথায় আসলো। আমার পরিচিত অনেকেরই স্কুলজীবনের অভিজ্ঞতা এত সুখকর না আমি জানি, সেই কারণেই নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হয়। যাইহোক, টপিক থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। তো এই ভাঙ্গাচুরা শাহজানপুরের চিপাচাপা আমার প্রায় মুখস্ত হয়ে যায় ঐ কয়েক বছরে। কালের পরিক্রমায় ওখান থেকে সরে আসলেও আমি মাঝে মাঝেই অবচেতনে নিজেরে ওখানে আবিষ্কার করি। এই ভোরে ব্যাগ কান্ধে দৌড়াইতেসি টাইপ, মাঝের কোনো গ্যাপে ঝিলপাড়ে খেলতেসি টাইপ (লুক হাউ দে ম্যাসাকারড মাই চাইল্ড নাউ), মারামারি ফাডাফাডি বুলিং হইতেসে কিংবা কাওরে তার বাসার নিচ বা বারান্দা পর্যন্ত ফলো করতেসি টাইপ, সবই এখনো চোখে ভাসে। তো মাঝে মাঝে ক্যারা উঠলে আমি এই জায়গাগুলায় চলে যাই, দেজা ভ্যু টাইপের একটা অনুভূতি হয়, দুর্দান্ত লাগে।
এরকম আরেকটা জায়গা হচ্ছে মতিঝিল রেলওয়ে আর এজিবি কলোনি। আমার রোদে পুড়ে কালা হওয়ার দায়ভার এই কলুষিত এরিয়া আর তদসংলগ্ন মাঠগুলার। এই এলাকা পড়ত স্কুলে যাওয়ার পথেই বা পাশেই, তারপর কলেজ আর উদ্ভাস সূত্রে এইখান দিয়েও দীর্ঘসময় টানা যাতায়াত। ফ্রেন্ডদের বাসাটাসা উপলক্ষে আরেক লেয়ার যুক্ত। এইদিকেও চলে যাই মাঝে মাঝে ধিমধাম। মানুষজন নাই আর আগের মত, অনেকেই চলে গেসে এলাকা ছেড়ে, তাও ভাল লাগে। জিনিসটা অদ্ভুত এই সেন্সে যে, কোনো জীবন্ত মানুষ বা ফিজিকাল আর্টিফ্যাক্টের জন্য না, বরং শুধু এবং শুধু মাত্র লোকেশনের প্রতি টান কাজ করে দেখে বারবার ফেরত আসতে ভাল্লাগে। তো লিস্ট করলে এরকম আরো কিছু পাওয়া যাবে আশেপাশে, নাম নিলাম না আলাদা করে। সম্ভবত এই লিস্টে নতুন করে যোগ হচ্ছে আমার পলাশি আর বুয়েট। অলরেডি ঐ ফেজে চলে আসছি আসলে, ঐদিকটায় এখন যেহেতু রেগুলার যাওয়া হয়না, নেক্সটে যখন যাওয়া হবে, হয়তো এই স্টাইলেই যাওয়া হবে। অবসর কাটাইতে আর জায়গা দেখতে, হুটহাট, অড টাইমে। যদি কখনো দেশ থেকে দূরে যাই দীর্ঘ সময়ের জন্য, আমি মেবি এই সেশনগুলা খুব মিস করব। বিশেষ করে মধ্যরাতে হাঁটতে হাঁটতে বা রিকশা ধরে নাজিরাবাজার যাওয়া, হলের রাস্তাটায় দাঁড়ায় জীবনমুখী আলাপ করা, অথবা রাত্রে ডাইনিং শেষে সোনালি ব্যাংক দিয়ে ঢুকে পুরা ক্যাম্পাস ঘুরে মেইন গেট দিয়ে বের হওয়া- এইগুলা তো একেবারে ছাপ্পা মারা স্টাইলে মগজে থেকে যাবে, শতভাগ নিশ্চিত।
আপনার পছন্দের উদ্ভট পাসটাইম কী?