২৯-০৪-২০২০
বুয়েটে ঢোকার পর অনলাইনে সিনিয়রদের কাছ থেকে সবচেয়ে বিনোদনের যে জিনিসটা দেখেছিলাম, সেটা খুব সম্ভবত একটা ছবি। ভর্তির সময় জমা দেওয়া অফিসিয়াল ছবি, বছরঘুরে আসা এনট্র্যান্স ডে এর একটা ছোট্ট উদযাপন হিসেবে এই ডিপি বদলানো।
বাচ্চা ডিপি দেখে হাহা দেওয়া জায়েজ, এটা ক্লাস নাইনের শেষে তোলা ছবি, এটায় আরো বেশি জায়েজ। কিন্তু অবাক করার মতো বিষয় অন্যখানে। দেখতে দেখতে নাকি এক বছর পার হয়ে গেলো, এখানে পা রাখার। জিনিসটা হুট করে গিলে ফেলা কষ্টকর ঠেকে।
কতকিছু ঘটেছে মাঝখানে, কত কিছু পেয়েছি, হারিয়েছি, সেসব হিসাব আপাতত থাক। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও আসলে আর কিছু বলার নাই, ছোট থাকতে নানাবিধ(!) কারণে পাবলিক ভার্সিটিয়ালাদের ক্যাম্পাসে মোটামুটি ডাবল সময় পার করে দেওয়ার যে কাহিনী শুনতাম, সেটাও ফলে যায় নাকি, কে জানে। আসলেও কেউ কি জানে? অন্তত, ৪ বছরের জায়গায় ৮ বছর কাটানো লাগলেও যেন হাসিমুখে গর্ব করে বলার মত অনেক কিছু ঘটে যায় এই মাঝের সময়টায়, সেটাই চাওয়া থাকলো!
এই জিনিস কোন ব্যাচ থেকে চালু হয়েছিল, জানা থাকলে জানাবেন। এখন থেকে প্রতিবছর ২৯ এপ্রিল এই ডিপি দিবো, সবাই হাহা দিবে, আর আমি এক বছরের পুরান ক্যাপশন পড়ে খানিকটা মজা লুটে তারপর নতুন ক্যাপশন লিখবো।
২৯-০৪-২০২১
দুই বছর কমপ্লিট হয়ে গেল, যথারীতি এবং আয়রোনিকালি সেটা কাগজে-কলমে না, ক্যালেন্ডারের পাতার হিসাবে। যা যা দেখা লাগলো সেসব কোনোভাবেই সুখকর না, তাই এ বেলা আফসোস করে আসলে লাভ নাই- বেঁচে থাকার, সুস্থ শরীরে থাকার আনন্দ অন্যরকম- এই উপলব্ধি বিগত এক বছরে ক্ষণে ক্ষণে মনে হইছে। এখন তাই আর তিন বছর শেষে বয়স এক বাড়ার বিষয়টা গায়ে লাগে না তেমন- দেখা যাক কোথায় গিয়ে ঠেকে! মড়ার উপরের খাঁড়ার ঘা-টাকে এই মুহূর্তে আসলে একটা নির্মম ইউনিভার্সাল ষড়যন্ত্র হিসেবে দোষারোপ করা ছাড়া কিছু করার নাই- অন্তত এই ধ্বংসস্তূপের দিনগুলোতে বহাল তবিয়তে এখনো শ্বাস নেওয়া যাচ্ছে- এটাই ঢের সই। তবে জীবন আর জীবন নাই, একটা পার্ফেক্ট ‘ডেড ইনসাইড’ হালের উদাহরণ হয়ে ঝুলে আছে। মাঝে মাসখানেকের জন্য পাওয়া রঙবেরঙের দিনগুলা, জায়গাগুলা তাই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিই মিস করি, এই দিনগুলা আবার ফিরে পাওয়ার আশাই আপাতত বাঁচায় রাখে। অতএব, চিয়ার্স টু গুড ডেইজ। তুমি আর আমি যাই ক্রমে সরে সরে, কিন্তু আশা রাখি, দেখা একদিন হবে বিজয়ে।
একটা সুন্দর হাসিমুখর ক্যাম্পাসে বার্ষিকী উদযাপনের বাসনাটা তাই জোর করেই তুলে রাখতে হচ্ছে- কোনো এক সুন্দর রোদ ঝলমলে দিনে সুন্দর শহরে ল্যান্ড অফ লিভিং এ আবার দেখা হবে সবার। খেয়াল করে দেখলাম, কালের পরিক্রমায় পুরান বুয়েটের নিয়মানুযায়ী হাফ ওয়ালে বসার বিলাসিতা এখন হালাল হয়ে গেছে- তেমন কিছু না, শুধু ঘুম কাটানোর তালে ওয়ান টাইম কফির কাপটা নিয়ে ক্যাফের নাক বরাবর হাফ ওয়ালে বসে একটু পেটে কফি আর বুকে ঠাণ্ডা বাতাস ঢালার ইচ্ছা করতেসে হঠাৎ।
নিজ দায়িত্বে হাহা দিয়ে ধন্য করুন, আজকের দিনে হাহা খেতেও সুখ।
২৯-০৪-২০২২
চার বছর, তৃতীয় এন্ট্রান্স ডে, সেকেন্ড ইয়ার পাশ। ফ্রাস্ট্রেশন আসার জন্য এতটুকু ইনফোই যথেষ্ট। তবে এনার্জি যা ড্রেইন হওয়ার তা হয়ে গেছে। এক উইক শর্ট ক্যালেন্ডার, আবার স্বশরীরে ক্লাস-ল্যাব-কুইজ, নতুন চেখে দেখা হল লাইফ, আর শেষে রোজার মধ্যে পরীক্ষা- সবমিলায়ে টু-টুর পুরাটাই একটা পর্যায়ে অসহনীয় লাগতেছিল বললে ভুল হবে না। কিন্তু সদ্য টার্ম ফাইনাল শেষ হওয়ায় আর ফ্রাস্ট্রেশন ঝাড়ার মত অবস্থায় নাই এখন!
ক্যাম্পাস নিয়ে একটা ফিলিং মেনশন করার দাবি রাখে। ফার্স্ট ইয়ার শেষে মনে হচ্ছিল যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে বের হইতে পারলে বাঁচি। এই তাগিদ এখনো আছে, কিন্তু ‘গ্লাসের অর্ধেকটা খালি হয়ে গেছে’ এই অনুভূতি কিছুটা প্রকট হইছে এবছর। থ্যাংকস টু মহামারী- দুই বছরে একটাও জাতের ফেস্ট-ইভেন্ট না পাওয়ায় এই কষ্ট আরো বাড়তির দিকে। কিন্তু ইন জেনারেল, আমার ধারণা এইটা একটা সাইনুসয়ডাল, এক বছর পরে আবার কমবে, তারপর আবার বাড়বে।
দুই বছর নিজের ক্যাপাসিটি, এ্যাবিলিটি, লাইফস্টাইল, হ্যাবিটের উপর একটা বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেছে- আপাতত মাথায় এই খারাপ দিকটাই আসতেছে। খারাপ বলা হয়তো ঠিক হইলো না- যদি সবকিছুরেই সাদাকালোর জায়গায় গ্রে ধরে নেই। জীবনে ধাক্কা খাওয়াটা একটা নেসেসারি ইভিল- কিচ্ছু করার নাই। ধাক্কা সামলায়ে উঠতে পারা যাবে কিনা সেইটা হইলো প্রশ্ন। ভালো দিক কমই লাগে, বাট সেগুলাও একনলেজ করা দরকার। অল দোজ আগের চেয়ে পরিণত বুলশিট। সব মিলায়ে একটা মিশ্র অনুভূতি। এইটাই হয়তো নর্মাল।
সামনে পুরা ইঞ্জিনিয়ারিং লাইফেরই সবচেয়ে কঠিন বছর- সবার জন্যই। মাথা ঠিক রেখে এইটা উতরায়ে যেতে পারলে হয়। দোয়াপ্রার্থী!
২৯-০৪-২০২৩
চতুর্থ বছর, এখনো থার্ড ইয়ার শেষ হয়নাই। আগের মত প্যারাগ্রাফ লেখার তেল কমে আসছে অনেকাংশে, এটাই প্রমাণ করে কীসের ভিতর দিয়ে যাওয়া লাগতেসে। মোটামুটি সেলফ-কনফিডেন্সের বারোটা ছাড়ায়ে তেরোটা বেজে গেসে ইন দা মীনটাইম, এখন খালি দিন গোণার মোডে চলে আসছি। তবে মনে হয় এতদিনে ধারণা হইসে একটা যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যটা আসলে কী। একদিন বাদেই পরীক্ষা, উপর নিচ সবকিছুই লকড। সময় পাইলে আরো কিছু লেখা যাইত এই নিয়ে, এখন ফুলস্টপ।
২৯-০৪-২০২৪
আন্ডারগ্র্যাডের পাঁচ বর্ষপূর্তি বিষয়টাই একটা নিদারুণ আইরোনি। বেশি কিছু বলার তেল আগেই ফুরায় গেছিল দেখা যাচ্ছে, এখন জানটা হাতে নিয়ে বের হয়ে যাইতে পারলেই শান্তি। একটা জিনিস এই এক বছরে নতুন দেখা হয়ে গেছে- সেইটা তোমরা যারা বাচ্চা কাচ্চা তারাও কর্নার পাওয়ার বয়স আসলে দেখে ফেলবা, প্যারা নাই। But as much as I am fed up with this place, I will definitely miss being here and the people I met here once I am out. That’s how it was supposed to be. একটু গুছায়ে নিয়ে ভকভক করবো আলাদা আলাদা পোস্ট দিয়ে- শেষের দিকের সুন্দর কিছু দিন অনেক কথা জমা করে দিয়ে গেছে আসলে। সর্বশেষ এন্ট্রান্স ডেতে এই ফটকা ট্রেডিশন শেষবারের মত পালন করা হয়ে গেল। আপাতত বিদায়। বুলেট চদি।